ঘুরে আসুন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

প্রকাশঃ মার্চ ১৯, ২০১৫ সময়ঃ ১:০০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:০০ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

053c94bc398e7a8880e1de4bbedd990d-01-SAFARI-PARKহঠাৎই তাকিয়ে দেখলেন সোজা আপনার দিকে এগিয়ে আসছে একটা বাঘ! বাঘই হোক কিংবা সিংহ বা ভালুক, আর যতই সে আপনাকে দেখুক বা এগিয়ে আসুক, আপনার নাগাল পাচ্ছে না! এমন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকলেও আমরা অনেকেই হয়তো সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখি। দেখে মনে হয়, এই বুঝি সিংহের কবলে পড়ে গেল ওরা! কিন্তু না, ভয়ের কিছু নেই! আসলে গাড়িতে চেপে ঘুরে ঘুরে আফ্রিকার কোনো বিশাল সাফারি পার্কে বেড়াচ্ছিলেন ওই পর্যটকেরা। আপনাকে কিন্তু আফ্রিকায়ও যেতে হবে না অথবা নিছক সিনেমায়ও দেখতে হবে না, যেকোনো দিন নিজেই ঘুরে আসতে পারেন এমন সাফারি পার্কে।

প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণ করা পশুপাখি, জীবজন্তু দেখার ব্যবস্থা নিয়ে ঢাকার একদম পাশে গাজীপুরে গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একদিন ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা এবং ছোট্ট সোনামণিদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজন্তু সম্পর্কে সরাসরি পরিচিত করিয়ে দেয়ার সুযোগ রয়েছে এই সাফারি পার্কে। ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটারের রাস্তা। সেখানেই একসময়ের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের ঐতিহ্যবাহী গাজীপুরের ভাওয়ালগড়। ওই ভাওয়ালগড়ের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশেই চালু করা হয়েছে এই বঙ্গবন্ধু সাফারি পাক।

সাফারি পার্কের এক হাজার ৩৩৫ একর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কোর সাফারি পার্ক। এখানে বন্য পরিবেশে বন্য প্রাণীরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করে। আপনি পার্কের গাড়িতে চড়ে বেষ্টনীর ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পারেন বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতা, চিত্রা হরিণ, সাম্বার ও গয়াল, হাতি, জলহস্থি, নীল গাই, বারো সিংগা, বন্য মোষ।

কোর সাফারি পার্ক অঞ্চলে আছে আফ্রিকান সাফারি পার্ক। এখানে রয়েছে আফ্রিকান বন্যপ্রাণীর বিশাল সংগ্রহ। বিশাল দেহ আর লম্বা গলার জিরাফ আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য সদা প্রস্তুত। এখানে আরো বিচরণ করে বন্যপ্রাণী জেব্রা।

bb62b5bf92e3e0be8f6e733145e4c7b0-03-SAFARI-PARK৫৭৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সাফারি কিংডম। এখানে রয়েছে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, জিরাফ ফিডিং স্পট ও পেলিকেন আইল্যান্ড।

আপনি যদি পাখি প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহলে চলে যান পাখিশালায়। পাখির খাঁচার কাছে যেতেই আপনার মন আনন্দে ভরে উঠবে নানা প্রজাতির রং-বেরঙের দেশি-বিদেশি পাখি দেখে।

আপনি বণ্যপ্রাণী দেখতে দেখতে ক্ষুধার্ত আর ক্লান্ত হয়ে গেলে আপনার জন্য আছে টাইগার ও লায়ন রেস্টুরেন্ট। নাম শুনে ভয় পেয়ে গেলেন? ভাবছেন সেখানে গিয়ে খাবার হয়ে বাঘ সিংহের পেটে যাওয়ার কথা তাই না? না ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, বাঘ ও সিংহ আপনাকে খাবে না। আপনি খাবার খাবেন আর বাঘ ও সিংহ আপনাকে পাহারা দেবে, মাঝখানে থাকবে কাঁচের দেয়াল।

খাবার পর আপনি এখন শক্তি সঞ্চয় করে ফেলেছেন নিশ্চয়েই? চলুন তাহলে এবার উঠা যাক ওয়াচ টাওয়ারে। এই টাওয়ার থেকে আপনি দেখতে পাবেন সমগ্র সাফারি পার্কের মনোরম দৃশ্য। দেখতে পাবেন পার্কের ভিতর বিচরণরত বাঘ, সিংহ, হাতি, জেব্রা, জিরাফ, হরিণ ইত্যাদি বন্যপ্রাণী। এশীয় তৃণভোজী এবং ছোট মাংসসাশী প্রাণী, পাখি সরিসৃপ ও উভয়চর প্রাণী নিয়ে ৮২৪ একর জমির ওপর এক্সটেনসিভ এশিয়া সাফারি প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া বৃক্ষরাজিসমৃদ্ধ প্রায় ১৫০ একর জায়গায় তৈরি করা হয়েছে হাতির আশ্রম।

সাফারি পার্কে বিচরণরত বন্য পশুপাখির পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য আছে আটটি জলধারা ও দুটি কৃত্রিম হ্রদ। যেখানে বিভিন্ন জাতের দেশি বিদেশি বুনো হাঁসের ওড়াউড়িসহ নানা রকম জলকেলি আপনার মন ভরিয়ে দিবে।

আপনি যদি সাহসী হয়ে থাকেন আর ভয় না পান তাহলে চলে আসেন স্নেক পার্কে- এখানে আপনি হরেক রকম ও বর্ণের সাপ দেখতে পাবেন। এ ছাড়া আপনাকে আনন্দিত করবার জন্য সাফারি পার্কে আছে বাটারফ্লাই পার্ক যেখানে প্রতিনিয়ত হয় রঙের উড়াউড়ির খেলা। আছে ক্রোকোডাইল ও লিজার্ড পার্ক।

যেভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ রুটের যেকোনো বাসে গাজীপুরের বাঘের বাজার নামতে হবে। যেতে আনুমানিক দুই ঘণ্টা সময় লাগে, তবে রাস্তায় জ্যাম পড়লে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। বাঘের বাজার নামলেই চোখে পড়বে সাফারি পার্কের গেট। সেখান থেকে রিকশায় ২০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন পার্কের মূল প্রবেশ ফটকে।

পার্কে প্রবেশ ফি
প্রতিজন বয়স্ক ৫০টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছরের নিচে) ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের ১০ টাকা, শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থী গ্রুপ (৪০-১০০ জন) ৪০০ টাকা, শিক্ষা সফরে আগত শিক্ষার্থী গ্রুপ (১০০ জনের বেশি) ৮০০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের পাঁচ ইউএস ডলার প্রবেশ ফি ধার্য করা হয়েছে।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G